অর্শ রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে নিন

আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো অর্শ রোগ থেকে মুক্তির উপায়। আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে পাইলস বা অর্শ রোগের শিকার হয়ে থাকেন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য।সেজন্য অর্শ রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে পুরো পোষ্ট টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
                                                                        
অর্শ


অর্শ কি

অর্শ, যাকে হেমোরয়েডও বলা হয়, যা হলো অন্ত্রের কাছাকাছি রক্তনালীর প্রসারণ এবং প্রদাহজনিত একটি সমস্যা। এটি সাধারণত দুই ধরনের হয় থাকে, যেমন:

বাহ্যিক অর্শ: এই অসাটি হলো সবথেকে স্বাভাবিক বা সাধারণ এবং অস্বস্তি কর এক ধরনের অর্শ। এই অর্শ সাধারণত মলদ্বারের চারপাশের ত্বকে হয়ে থাকে।এই অর্শ হলে মাঝেমধ্যে অনেক চুলকানি এবং ব্যথা অনুভব হয়।

অভ্যন্তরীণ অর্শ: যা অন্ত্রের অভ্যন্তরে থাকে এবং সাধারণত রক্তপাত ঘটায়। এই অর্শ যতদিন না বড় হয় ততদিন স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় না এবং এগুলো নিরবে রক্তপাত ঘটায়।

অর্শ কি কারনে হয়

অর্শ বা হেমোরয়েড মূলত বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হল:
  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস : ফাইবারের অভাব, যেমন পাউরুটি, ফল এবং সবজি কম খাওয়া।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: বিশেষ করে অফিসে কাজ করার সময় বা দীর্ঘ ভ্রমণের সময়।
  • অতিরিক্ত চাপ দেওয়া: পায়খানা করার সময় অতিরিক্ত চাপ দিলে।
  • গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় জরায়ু রক্তনালীর উপর চাপ দিতে পারে, যা অর্শ সৃষ্টি করতে পারে।
  • বংশগত কারণঃ পরিবারের মধ্যে অর্শের ইতিহাস থাকলে তা আরো সম্ভবনা বাড়ায়।
  • ওবেসিটি: অতিরিক্ত ওজনও রক্তনালীর উপর চাপ বাড়ায়।
  • শারীরিক অসঙ্গতি: নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের অভাব।
এছাড়াও, কিছু রোগের কারণে যেমন দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, অর্শের ঝুঁকি বাড়তে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন করার মাধ্যমে অর্শ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অর্শ রোগের ওষুধ

অর্শ (হেমোরয়েড) চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আছে, যার মধ্যে কিছু সাধারণ হলো:

স্থানীয় ওষুধ

ক্রিম বা পেস্ট: অর্শের স্থানীয় ব্যথা এবং চুলকানি উপশম করতে সাহায্য করে। এতে সাধারণত হেমোরয়েডের জন্য উপযুক্ত উপাদান থাকে, যেমন হাইড্রোকরটিজোন।

ওরাল ওষুধ

  1. দৈনিক ফাইবার সম্পূরক: যেমন মেটামুসিল বা সাইট্রাস ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
  2. ব্যথা নিরাময়: যেমন পারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন, যা ব্যথা উপশম করতে সহায়ক।
অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি:
  1. লিগেশন: বিশেষভাবে থ্রেড দিয়ে রক্তনালীর রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া।
  2. স্ক্লেরোথেরাপি: বিশেষ তরল ইনজেকশন করে অর্শের সাইজ কমানো।
  3. লেজার থেরাপি বা অস্ত্রোপচার**: মারাত্মক ক্ষেত্রে অর্শ অপসারণের জন্য প্রয়োজন হতে পারে।
অর্শের চিকিৎসার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত, কারণ উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি আপনার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।

অর্শ রোগ থেকে মুক্তির উপায়

অর্শ (হেমোরয়েড) থেকে মুক্তির জন্য বেশ কিছু উপায় এবং সতর্কতা গ্রহণ করা যেতে পারে:

খাদ্যাভ্যাস
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য: ফল, সবজি, সাদা শস্য এবং মটরশুঁটি বেশি করে খাওয়া।
  • প্রচুর পানি পান: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
শারীরিক কার্যকলাপ
নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটা বা অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ করুন।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
  • বাথরুমে দীর্ঘ সময় কাটানো এড়িয়ে চলুন: পায়খানা করার সময় চাপ দেবেন না এবং দীর্ঘ সময় বসে থাকবেন না।
  • আবেদনযোগ্য স্থানীয় চিকিৎসা: হেমোরয়েড ক্রিম বা পেস্ট ব্যবহার করুন।
চিকিৎসা পদ্ধতি
  • ওষুধ: স্থানীয় ক্রিম বা পেইন কিলার ব্যবহার করুন।
  • লিগেশন বা স্ক্লেরোথেরাপি: এগুলি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করুন, যা রক্তনালীর উপর চাপ কমাবে।

মেডিকেল সাহায্য
ডাক্তারি পরামর্শ: যদি উপসর্গগুলি গুরুতর হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।

এই পদ্ধতিগুলি অর্শের লক্ষণগুলি কমাতে এবং মুক্তির জন্য সাহায্য করতে পারে। তবে, সঠিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অর্শ রোগের ব্যায়াম

অর্শ (হেমোরয়েড) থেকে মুক্তি পেতে কিছু সহজ ব্যায়াম করতে পারেন, যা রক্ত চলাচল বাড়াতে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এখানে কিছু কার্যকর ব্যায়াম উল্লেখ করা হল:

কেগেল ব্যায়াম

কীভাবে করবেন: পেশীগুলিকে সংকুচিত করুন যেগুলি আপনি প্রস্রাব করার সময় ব্যবহার করেন। 5-10 সেকেন্ড ধরে ধরে রাখুন, তারপর ছেড়ে দিন। এটি 10-15 বার করুন, দিনে 3 বার।

লাভ: পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।

পেডালিং (Cycling)

কীভাবে করবেন: মাটিতে বসে বা শোয়ার অবস্থায় পায়ের পেশী ব্যবহার করে সাইকেলের প্যাডেল চালানোর মতো গতি করুন।

লাভ: এই ব্যায়ামটি পায়ের রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং ব্যায়ামের সময় চাপ কমায়।

পা উঁচু করা

কীভাবে করবেন: মাটিতে শুয়ে পা দুই দিকে উঁচু করুন এবং কিছু সেকেন্ড ধরে রাখুন।

লাভ: এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে এবং চাপ কমায়।

পায়ে ওঠা (Leg Raises)

কীভাবে করবেন: মাটিতে শুয়ে পা দুটো একসাথে উপরে তুলুন এবং কিছু সেকেন্ড ধরে রাখুন। ধীরে ধীরে নিচে আনুন।\

লাভ: এটি পেশী শক্তিশালী করতে এবং রক্ত চলাচল উন্নত করতে সাহায্য করে।

হাঁটা

কীভাবে করবেন: প্রতিদিন অন্তত 30 মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন।

লাভ: এটি দেহের সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।

যোগাসন (Yoga)

পদগুলি: "বতরাসন" (বাটারফ্লাই পোজ), "পশ্চিমোত্তানাসন" (সিটিং ফরোয়ার্ড ফোল্ড) ইত্যাদি।

লাভ: এটি শরীরের চাপ কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।

এই ব্যায়ামগুলি নিয়মিত করলে অর্শের লক্ষণগুলি উপশম হতে সাহায্য করতে পারে। তবে, ব্যায়াম শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

লেখকের শেষ কথা

অর্শ অসহ্যকর এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি একটি রোগ। যদি আপনি অর্শের কোন লক্ষণ দেখতে পান তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন এবং সঠিক চিকিৎসায় নিজের শরীরের চিকিৎসা করাবেন। নতুবা এই রোগ থেকে অন্যান্য রোগেরও সৃষ্টি হতে পারে তাছাড়া অপারেশন করার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য এই রোগের সঠিক চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আশা করব এই পোস্টটি আপনার জন্য উপকারী হবে। এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url