শীতকালীন রোগ ও প্রতিকার - শীতকালীন স্বাস্থ্য টিপস

সামনেই শীতকাল আসছে তবে আপনি কি জানেন শীতকালে কোন কোন রোগ হয়ে থাকে এবং সে সকল রোগের প্রতিকার কি ? যদি আপনি শীতকালীন রোগ সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টের মধ্যে আমরা শীতকালীন স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে আলোচনা করব।
                                                                               
শীতকাল

ভূমিকা

শীতকাল কিন্তু প্রায় উঁকি দিচ্ছে। তবে বাংলা ক্যালেন্ডার এর হিসাব মত পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস মিলে শীতকাল তবে কয়েক দিন ধরে শীতকালের শীতের একটা আমেজ আমরা সবাই কমবেশি অনুভব করতে শুরু করেছি। শীতকালে অনেক সৌন্দর্যময় হলেও এটি নিয়ে আসে কিছু খারাপ দিক যেমন হঠাৎ এই যে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে তাতে কিন্তু অনেকেই নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে না।

আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের সময়টাতে অনেকেই নানা অসুখে আক্রান্ত হতে শুরু করেন। শীতের এই আসন্ন সময়টা অনেক মানুষকে প্রায়ই চরমভাবে ভোগায়। শীতকালের এই সময়টাতে নানা অসুখ মানুষকে বেশ দুর্বল করে দেয়। তো চলুন এখন জেনে নেই শীতকালে আমাদের কি কি রোগ হতে পারে এবং সেগুলোর প্রতিকার কি। এক কথায় শীতকালীন স্বাস্থ্য টিপস গুলো এখন জেনে নেওয়া যাক।

শীতকালীন রোগ ও প্রতিকার

সর্দি-কাশি-হাঁচি ও নিঃশ্বাসে কষ্ট

এ সময় কারও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা হলে তা সহজে না সারার প্রবণতাসহ বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়ানোর সময়ে বিভিন্ন শীতকালীন অসুখ আমাদের শরীরে আক্রমণের সুযোগ নেয়।আবার অনেক ক্ষেত্রে ভৌগোলিক কারণে আবহাওয়া ও পরিবেশেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে।

অ্যালার্জি

শীতকালে কারও কারও অ্যালার্জি সমস্যা এ সময়ে বাড়ে।এমনটা ঘটে কারণ আমাদের শরীর কোনো পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের জন্য সময় নেয়। ফলে হঠাৎ তাপমাত্রা অথবা হঠাৎ আবহাওয়ার এই পরিবর্তন মানুষকে নানা অসুখে আক্রান্ত করার জন্য দায়ী। কিন্তু কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে সহজেই এগুলোকে দূরে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ভাইরাস জ্বর

আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস জ্বরের অবির্ভাব বেশ পরিচিত একটা সমস্যা। শীতকালেও আমরা এই সমস্যায় ভুগি।শীতকালে ভাইরাস জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। নানা ধরনের ভাইরাস যেমন- রাইনোভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা,অ্যাডিনোভাইরাস ইত্যাদি মূলত ভাইরাস জ্বরের জন্য দায়ী। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও যাদের শরীরে অন্য রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস আছে, তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম, প্রচুর তরল জাতীয় খাবার, বিশেষত খাবার স্যালাইন,লেবু-চিনির শরবত, ডাবের পানি এ সময়টা বেশ উপকারী খাবার। তাছাড়া কেউ যদিভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে সে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারে ।প্রয়োজনে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে ঠাণ্ডা পানীয় ও আইসক্রিম সম্পূর্ণ নিষেধ।ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। যাদের ক্রনিক ডিজিস আছে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। ছয় মাস বয়সের পর শিশুকেও ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।

অ্যালার্জি ও অ্যাজমা

শীতকালের রোগ গুলোর মধ্যে বেশ পরিচিত একটি সমস্যা হচ্ছে অ্যালার্জি ও অ্যাজমা।শীতকালে অ্যালার্জি ও অ্যাজমা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ দুটি অনেক ক্ষেত্রে একসঙ্গে হয়, যদিও কোনোটির প্রকাশ আগে হতে পারে। বারবার সর্দি-হাঁচি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বুকে চাপ সৃষ্টি করে ও আওয়াজ হয়। এ সময় ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা বেড়ে যায়। যেসব কারণে অ্যালার্জি হয় সেসব থেকে দূরে থাকা জরুরি। প্রয়োজনে নাকের স্প্রে,অ্যালার্জির ওষুধ  এবং বিশেষ প্রয়োজনে ইনহেলারও ব্যবহার করতে হতে পারে।

শীতের সময় অনেকে আবার সাইনোসাইটিসের সমস্যায় ভোগেন। সাইনোসাইটিসের লক্ষণ হতে পারে বারবার মাথা ধরা, সর্দি-কাশির প্রবণতা, কাশতে কাশতে বমি হওয়া, জ্বর ইত্যাদি। কোনো কিছুতে অ্যালার্জি থাকলে সেদিকে নজর দিতে হবে। অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিকস খাওয়াও জরুরি। তবে তা যেন অতিরিক্ত পর্যায়ের না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ফুসফুসের সংক্রমণ

শীতের সময় অনেকে আবার ফুসফুসের সংক্রমণের সমস্যায় ভোগেন। ফুসফুসের সংক্রমণকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক সংক্রমণ যা সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। আর লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক সংক্রমণ যা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। তবে ভাইরাল নিউমোনিয়াও হতে পারে। জ্বর, কাশি, কফ, শরীর ব্যথা ও বমি বমি ভাব হলো ফুসফুস সংক্রমণের লক্ষণ। তবে ভাইরাল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে সর্দি-হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়ার লক্ষণও দেখা দিতে পারে। সাধারণত শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এগুলো বেশি দেখা যায়।

শীতকালীন স্বাস্থ্য টিপস

শীতকালে এসব রোগের হাত থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।আসুন জেনে নেওয়া যাক প্রয়োজনীয় টিপসগুলো :
  1. শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রতিদিন উষ্ণ গরম পানি বা যে কোনো গরম পানীয় যেমন- চা, কফি, স্যুপ, দুধ খাওয়া ভালো। তাতে শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ও বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস কম ক্ষতি করে।
  2. বেশি শীতে শুধু একটা ভারী কাপড় না পরে, একাধিক পোশাক পরিধান করুন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী হলো হালকা কোনো কাপড় যা শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে এমন কিছু নিচে পরা, তার উপরে কয়েক লেয়ারে ফুল অন্যান্য জামা-কাপড় পরা। এটা বেশি ঠাণ্ডায় সবচেয়ে কার্যকরী।
  3. প্রতিদিন কিছু পরিমাণ কালিজিরা রান্না করে বা রান্না ছাড়া খেতে পারেন। কালিজিরা প্রায় ৩০০ রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  4. শীতে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি ঠাণ্ডা লাগার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
  5. প্রতিদিন খাবারে রসুন ব্যবহার করুন। কারণ কাঁচা রসুন ঠাণ্ডা লাগা কমায়।
  6. ঠাণ্ডা লাগলে বা কাশি হলে আদা ও লবঙ্গ অত্যন্ত কার্যকরী। আদা ও লবঙ্গের রস ঠাণ্ডা কাশি কমাতে সহায়ক। আদা ও লবঙ্গ দিয়ে চা খুবই কার্যকর।
  7. শীতের সকালে-বিকালে নাক বন্ধ মনে হলে নাকে গরম পানির ভাপ নিলে ভালো বোধ হয়। উপকার বেশি পেতে হলে গরম পানিতে কিছু ফিটকিরির টুকরা দিয়ে গরম ভাপ নিলে নাক বন্ধ হওয়া কমে যায়।
  8. শীতের সময় প্রতিদিন শরীরে সরিষার তেল লাগাতে পারেন কারণ সরিষার তেল শরীরকে গরম রাখেতে সাহায্য করে যা ঠাণ্ডা লাগা থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে।
  9. শীতে পানি খাওয়া কম হয়। যে কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সেই জন্য পানি জাতীয় গরম খাবার বেশি খেতে হয়।
  10. শীতকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা বেশি প্রয়োজন। শীতে ধুলাবালি বেশি থাকায় তাতে রোগ-জীবাণু বেশি থাকে এবং সে কারণে অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আপনি যদি উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চলতে পারি তাহলে শীতকালে যতই ঠান্ডা পড়ুক না কেন  শীতে আপনিও সুস্থ থাকতে পারবেন।

আমাদের শেষ কথা

শীতকালীন রোগ ও প্রতিকার এবং শীতকালীন স্বাস্থ্য টিপস এগুলি ছিল এই পোষ্টের মূল মুখ্য বিষয়। আমরা ইতিমধ্যেই শীতকালের বিভিন্ন রোগ এবং সে রোগ গুলো কেন হয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি সেই সাথে এমন কিছু টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি যেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আপনারা শীতকালে সুস্থ থাকতে পারবেন। আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। 

আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন, যাতে অন্যরাও এরকম উপকারী স্বাস্থ্য টিপস পেতে পারে। আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url