ঘরোয়া উপায় মুখে সাদা ছুলি দূর করার উপায়
আপনি কি নিজের মুখের ছলি বা ছুলি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন? কিভাবে মুখের ছুলি দূর করবেন বুঝতে পারছেন না? আপনি যখনই এই পোস্টে ক্লিক করেছেন তখনই আপনার দুশ্চিন্তা গায়েব হয়ে গিয়েছে। কারণ এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে এমন কিছু উপায় জানাবো যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে মুখের সাদা ছুলি বা ছলি দূর করতে পারবেন।
ভূমিকা
ছুলি বা ছলি কে ইংরেজিতে "আর্টিকারিয়া" বলে। ছুলি বা ছলি এক ধরণের চর্মরোগ। ‘আর্টিকারিয়া’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘আর্টিকা’ থেকে এসেছে যার অর্থ হল পুড়ে যাওয়া। ছুলি বা ছলি হলে ত্বকের উপর ফ্যাকাসে বাদামী বা লাল রংয়ের ছোট ছোট ফুঁসকুড়ির মতো ছাপ পড়ে। আবার কোন কোন সময় ছুলি বা ছলি হলে জ্বালা বা চুলকানি সৃষ্টি হতে পারে। মূলত ছুলি বা ছলি হয়ে থাকে ছত্রাক সংক্রমণের মাধ্যমে।
এই সমস্যাটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন ঘাড়, বুক, পিঠ ইত্যাদি স্থানে লক্ষ্য করা যায়। শুরুর দিকে ছুলি বা সালের সমস্যাটি অনেক ছোট মনে হলেও আস্তে আস্তে এটি বড় সমস্যা তৈরি করে। তাই আমাদের আগে থেকেই জেনে নেয়া ভালো যে কিভাবে মুখের ছুলি বা ছলি দূর করতে হয়। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘরোয়া উপায় মুখে সাদা ছুলি দূর করার উপায়।
ঘরোয়া উপায় মুখে সাদা ছুলি দূর করার উপায়
ছুলি এমন একটি ছত্রাকজনিত চর্ম রোগ যা একবার হলে যদি দ্রুত চিকিৎসা নেয়া হয় তাহলে ভাল হয়ে যায়। তবে যদি অনেক দিন চিকিৎসা না করা হয়, সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়, অনেক বড় জায়গায় হয়ে যায়, তখন শুধু মলমে এটি শেষ হয় না। সে ক্ষেত্রে খাওয়ার জন্য একটি ওষুধ দিতে হয়। ওষুধটি এক থেকে দেড় মাস খেতে হয়। সঙ্গে মলম দিতে হয়। তখন পুরোপুরি রোগ নিরাময় হয়।তাই আপনি আপনার ডাক্তার এর পরামর্শ মত ওষুধ গ্রহন করতে থাকুন।
কিন্তু কিছু বিষয় খেয়াল রাখার আছে। ক্ষতস্থান বা আক্রান্ত স্থানে সাবান বা শ্যাম্পু লাগানো যাবে না। সাধারণ সাবান, শ্যাম্পু এই রোগগুলো আরো বাড়িয়ে দেয়।এ রোগের ক্ষেত্রে ওষুধ দেওয়া আলাদা সাবান ও শ্যাম্পু পাওয়া যায়। সামগ্রিকভাবে এক মাস বা দুই মাসের জন্য ওই সময়ে অন্য সাবান, শ্যাম্পু বন্ধ রেখে, এইসব বিশেষ সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হয় । এতে কোনো ক্ষতি করবে না। সাবান-শ্যাম্পুর কাজও হয়ে যায়। এখন তাহলে চলুন জেনে নেই মুখের সাদা দাগ দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়।
নারকেলের তেল
প্রতিদিন সাদা দাগে ও হাত-পায়ের কালো দাগে নারকেলের তেল লাগিয়ে রাখলে খুব সহজে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। নারিকেলের তেল ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও প্রদাহজনিত সমস্যা খুব দ্রুত ভাল হয়ে যায়।
আদা
আপনি আদার রস পান করতে পারেন বা ক্ষত স্থানে আদা লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে আপনার রক্তচাপের প্রবাহ সঠিক থাকবে। আবার এটি শরীরের মেলানিনের পরিমাণ কমিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে।
কপার পাত্রে পানি
কপার বা তামার পাত্রে পানি পান করুন। সারারাত তামার পাত্রে পানি রেখে অবশ্যই সেই পানি খালি পেটে পান করবেন। এতেও শরীরে মেলানিনের পরিমাণ কমে যায়।
লাল মাটি
ত্বকের সাদা দাগ দূর করার জন্য লাল মাটির সাথে আদার রস মিশিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এতে খুব শীঘ্রই মুখের সাদা দাগ চলে যাবে।
লেবুর রস ও কাচা হলুদ
লেবুর রস ও কাচা হলুদের পেস্ট বানিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এতে খুব শীঘ্রই মুখের সাদা দাগ চলে যাবে।
টমেটো জুস
একটি বড় ও পাকা টমেটো নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর এটিকে ভালো করে ম্যাশ করে নিয়ে ছুলিতে আক্রান্ত স্থানে লাগান। হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন যেনো রোমকূপ দিয়ে রস ভালোভাবে প্রবেশ করে। ১৫-২০ মিনিট এভাবে রেখে দিন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারের কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। দুই সপ্তাহ যাবত দিনে দুই বার এটি ব্যবহার করুন। দুই সপ্তাহ পরে আপনার ছুলি অনেকটাই হালকা হয়ে আসবে এবং আপনার ত্বক উজ্জল ও টানটান হবে।
টক দুধ
যদি জেনেটিক কারণ না হয় তাহলে টক দুধের মাধ্যমে ছুলির সমস্যা দূর করা যায়। দুধের ল্যাক্টিক অ্যাসিড ছুলি দূর করতে চমৎকারভাবে কাজ করে। টাইরোসিনেজ নামক এনজাইম শরীরে মেলানিন ও অন্যান্য রঞ্জক উৎপাদনের জন্য দায়ি। ল্যাক্টিক অ্যাসিড টাইরোসিনেজ এনজাইমের অতিরিক্ত উৎপাদনকে বাধা প্রদান করে এবং এর ফলে ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশনকে রোধ করে।
হাইপারপিগমেন্টেশনের একটি প্রকার হচ্ছে ছুলি। ৩চা চামচ টক দুধ নিয়ে একটি কটন বলের সাহায্যে মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিট রাখুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ৩-৪ বার এটি ব্যবহার করুন। যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় অথবা ব্রণ থাকে তাহলে টক দুধের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন। দইও ল্যাক্টিক অ্যাসিডের ভালো উৎস।
লেবুর রস
ছুলি বা বাদামী দাগ দূরীকরণে লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকরী। লেবুর রসে চামড়ার রঙ হালকা করার উপাদান আছে যা ত্বকের গাঢ় দাগ দূর করে ব্লিচের মাদ্ধমে। লেবুর রস চিপে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করুন। ১৫-২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন দুইবার এটি করুন। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে লেবুর স্ক্রাব। একটি লেবুর অর্ধেকটা অংশ কেটে নিয়ে তার উপর আধা চামচ চিনি ছিটিয়ে নিন। তারপর এটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকুন। কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে এক বা দুই সপ্তাহ নিয়মিত করুন।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজে এক্সফলিয়েটিভ উপাদান আছে যা ছুলি দূর করতে পারে। ভালো ফল পাওয়ার জন্য লাল পেঁয়াজ ব্যবহার করুন। একটি লাল পেঁয়াজ মোটা করে কেটে নিয়ে ছুলিতে আক্রান্ত স্থানে দিনে দুই বার আস্তে আস্তে ঘষুন। যতদিন পর্যন্ত না ছুলি ফ্যাকাশে হয় ততদিন এটি ব্যবহার করুন।
ভেজিটেবল ফেস মাস্ক
দুই টুকরো শশা ও দুই টুকরো স্ট্রবেরি নিয়ে ভালোভাবে ম্যাশ করে নিন। এবার এর সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। সবজির এই মাস্কটি ছুলির উপরে লাগিয়ে বাতাসে শুকাতে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ছুলি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এবং ত্বকের টোন উন্নত করার জন্য সপ্তাহে চারবার এটি ব্যবহার করুন।
এছাড়াও সাওয়ার ক্রিম, মধু, কমলার খোসা, জোজোবা তেল, হলুদ, ভিটামিন ই অয়েল, বাটার মিল্ক, পেঁপে, বেগুন, সজনে, আমন্ড তেল এবং কলা ও পুদিনার ফেস মাস্ক ছুলি দূর করার উপায়।
মুখে ছুলি দূর করার ক্রিম
- (Ornoderm Cream) ওর্নোডার্ম ক্রিম
- (O2 Derm Cream) ও২ ডার্ম ক্রিম
- (Panderm+ Cream) প্যানডার্ম প্লাস ক্রিম
- (Taf Plus Cream) টাফ প্লাস ক্রিম
- (Neo Castor-Nf Cream) নিও ক্যাস্টর-এন এফ ক্রিম
আমাদের শেষ কথা
এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে মুখের ছুলি বা ছলি দূর করার বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে এবং সেই সাথে আপনাদেরকে জানানো হয়েছে মুখের ছবি দূর করার কিছু ক্রিমের নাম। আশা করি এই তথ্যগুলো থেকে আপনি আপনার রোগ বা সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। আর সব সময় নিজের ত্বকের এবং শরীরের যত্ন নিবেন যাতে করে এরকম সমস্যার সম্মুখীন আর না হতে হয়। যদি আজকের এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন যাতে এরকম সমস্যার সম্মুখীন মানুষের সমস্যার সমাধান পেয়ে যায়। আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url