মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে কিছু কথা

আজকে আমাদের পোষ্টের আলোচ্য বিষয় হলো পিরিয়ড বা মাসিক। এই পোস্টটি আপনাদের সকলেরই পড়া উচিত যদি আপনি মেয়ে নাও হন তাও এটি পড়া উচিত। কারণ এই পোস্টের ভিতরে এমন কিছু কথা আছে যা আপনার জানা খুবই দরকারি। আমাদের বিশ্বাস এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক কিছু শিখবেন। তো চলুন জেনে নেই মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে কিছু কথা।
                                                                   
পিরিয়ড

                  

মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে কিছু কথা

মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে হাজার একটা পোস্ট ফেসবুকে, ইন্সটায়, ট্যুইটারে। পিরিয়িডে মেয়েদের ব্যথা হয়, পিরিয়ডে মেয়েদের সাংঘাতিক কষ্ট হয়। পিরিয়ডের রক্ত জামাকাপড়ে লাগলে ছেলেরা এভাবে তাকায়, ছেলেরা ওভাবে তাকায়৷ পিরিয়ড হলে পূজো দেওয়া যায় না। মা দূর্গারও পিরিয়ড হয়৷ পিরিয়ডে বাড়ির বৌকে সারাদিন কাজ করতে হয়। পিরিয়ডে মেয়েদের অশুচি বলা হয়৷ ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ। আচ্ছা আমার একটা এসব সংক্রান্ত প্রশ্ন আছে। 

পিরিয়ডে এসব যে হয় তা আমরা সবাই জানি। এসব থেকে মুক্তি পাব কি করে সেটা কি আমরা কখনো ভাবি? নাকি কেবল মাত্র প্রোফাইলে, পেজে, অ্যাকাউন্টে লাইক কমেন্ট শেয়ার কুড়ানোর জন্যে মেয়েদের পিরিয়ডটাকে পন্য হিসেবে ব্যবহার করি? আচ্ছা যারা মেয়েদের পিরিয়িড নিয়ে এত জ্ঞান দেন তারা কেউ কখনো বলতে পারবে মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন শারীরিক কষ্ট লাঘব হবে কিভাবে? মেডিক্যালের বই পড়ার কথা বাদ দিন। 

তারা কি অন্ততপক্ষে কখনো গুগলটুকুও সার্চ করে দেখেছে যে মেয়েদের এই কষ্ট কিভাবে লাঘব হবে? কিভাবে মেয়েরা মুক্তি পেতে পারে এই অসহ্য বেদনা থেকে? তাদেরকে একবার জিজ্ঞেস করুন। গ্যারান্টি ব্লক করবে আপনাদের। কারণ তাদের কাছে মেয়েদের পিরিয়িড মানে পন্য, কখনো তারা প্রোফাইল বা পেজের রিচ বাড়াতে পিরিয়িডের রক্তের গন্ধ শুকছে তো কখনো পিরিয়ডে মা দূর্গার কি হয় কিংবা পিরিয়ডে মেয়েদের কত কষ্ট হয় তা নিয়ে বাতেলা বাজি করছে। 

এক এক সময় মনে হয় পিরিয়ডে মেয়েদের যত না কষ্ট তার থেকে বেশি কষ্ট হয় এসব ফুটেজখোর মানুষদের। এরা হয়ত মনে প্রাণে কোনো কালেই চায় না যে মেয়েরা পিরিয়ডের সময় সুস্থ থাকুক, এবং সমস্ত রকম মানসিক পীড়ার উর্ধ্বে থাকুক। কারণ সেটা থাকলে আখেরে এদেরই লোকশান। প্রোফাইল রিচ পাবে না। হাজার হাজার লাইক কমেন্ট আসবে না। এদের তো ফুটেজ মাথায় উঠে যাবে।

তো যাই হোক এবার আসা যাক কাজের কথায়৷ পিরিয়ড হলে কি করবেন কি করবেন না সে কথায়।

অধিকাংশ মেয়েরই পিরিয়ডের সময় সাংঘাতিক ব্যথা হয়। অনেকে পিরিয়ডের রক্তের গন্ধে ওই পাঁচদিন না তিনদিন কিছুই খেতে পারে না। অনেকে খেলেও বমি করে। সেক্ষেত্রে তাদের শরীরে ঘাটতি দেখা যায়। হয়ত শুনে থাকবেন অনেক মেডিক্যাল প্র‍্যাক্টিশনাররাই বলেন মেয়েদের সাথে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া কথাটি নাকি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কথাটা সত্যি। জীবনে একবারও অ্যানিমিয়া হয় নি এমন মেয়ে আপনি পাবেন না। তাহলে কিভাবে নিজেকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখবেন?
  • প্রথমত পিরিয়ডে আপনার যতই শরীর অসুস্থ থাকুন ভুলেও কখনো বিছানায় শুয়ে থাকবেন না। হাল্কা হাল্কা এক্সসারসাইজ করবেন যেমন যোগা, মর্নিং ওয়াক ইত্যাদি। দেখবেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। একটু চারপাশে তাকালেই দেখবেন অ্যাথিলিট মেয়েরা পিরিয়ডের সময়েও বিশ্রাম নেয় না। কারণটা একটাই। ওরা রেগুলার এক্সসারসাইজ করায় ওদের ফিটনেস আমাদের থেকে অনেক বেশি।
  • দ্বিতীয়ত, পিরিয়িডের ব্যথা সাংঘাতিক হলে কুসুম উষ্ণ জল হট ওয়াটার ব্যাগে ভরে হাল্কা হাল্কা সেঁক করুন নিজেকে। ব্যথা অনেকটাই উপশম হবে।
  • তৃতীয়ত, পিরিয়িডের সময় প্রচুর পরিমানে জল খান। জল যত বেশি খাবেন ততটাই ব্যথা কম থাকবে। কখনো ডিহাইড্রেটেড হতে দেবেন না নিজেকে।
  • চতুর্থত, ঠিক সেই ধরনের খাবার খান যেগুলো আপনাকে হেলদি রাখবে। এই সময় চেষ্টা করবেন স্পাইসি ফুড থেকে দূরে রাখতে। যতটা সম্ভব কম রিচ খাবার খাবেন। মশলাপাতি ছাড়া যদি বয়লেড ফুডে থাকতে পারেন সবচেয়ে ভালো। এসময়ে চেষ্টা করবেন কোনো ভাবেই চকোলেট, সোডা এসব খাবেন না।
  • পঞ্চমত, চা কফি থেকে দূরে নিজেকে রাখতে পারলে ভালো হয়। চা খেলে দুধ চা না খেয়ে কেবলমাত্র আঁদা সহযোগে লিকার চা খান। শুধুমাত্র কফিই না চকোলেট থেকেও দূরে থাকুন।
  • ষষ্ঠত, অন্ততপক্ষে আটঘন্টা টানা ঘুমোন। ওটা সত্যিই খুব দরকার। শরীর অনেকটা রিফ্রেশ লাগবে।
  • সপ্তমত, দিনে ছঘন্টা বা তারও কম সময় অন্তর অন্তর প্যাড বদলান। যেহেত্য এখনো বাজারে Tampons, Menstrual cup খুব একটা অ্যাভেল এবেল নয় তবুও যদি পান ব্যবহার করুন।
  • অষ্টমত, পিরিয়িডের ডেটের ওপর লক্ষ্য রাখুন। যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এবার আসি কি কি করবেন না?

১. আগেই বলেছি বিছানায় শুয়ে থাকবেন না। এতে আরো ব্যথা বাড়ে।

২. ব্যথা কমানোর জন্যে নিজের খেয়াল খুশিমত ওষুধ খেয়ে নেবেন না। সেরকম হলে ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করুন।

৩. উল্টোপাল্টা জার্নাল পড়ে গাদা গাদা চকোলেট খাবেন না।

৪. অতিরিক্ত স্কিন টাইট পোশাক পড়বেন না। নিজেকে সুন্দরী দেখাতে গিয়ে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করানোর কোনো প্রয়োজন নেই।

৫. মুড স্যুয়িং বেশি হলে পশু/পাখিদের সাথে সময় কাটান। কিংবা চিড়িয়াখানাতেও ঘুরে আসতে পারেন। কারণ অনেকেরই এই সময় নানা রকম দুশ্চিন্তা, মন খারাপ এগুলো হয়ে থাকে। এমন সব কথা মাথায় আসে যার কোনো দামই নেই৷ তাই নিজেকে ওদের সাথে রাখুন৷

৬. অধিকাংশ সময় মেয়েদের পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব চলাকালীন বিভিন্ন রকম গন্ধ হয়। সেক্ষেত্রে অনেকেই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়৷ সেক্ষেত্রে সময় সময়ে প্যাড বা ট্যাম্পন চেঞ্জ করে, কিছু পারফিউম সোপ ব্যবহার করেও সহজেই এই গন্ধ নিয়ন্ত্রন করা যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রেও লক্ষনীয় যে গন্ধ যদি স্বাভাবিক না হয় অর্থাৎ ভীষণ রকম আঁশটে গন্ধ হয় তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি Bacterial Vaginosis বা Trichomoniosis র মত রোগে আক্রান্ত হলেও হতে পারেন। এটি মূলত STD র অর্থাৎ Sexual Transmission Disease র আওতায় পরে। তাই দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গেই গায়নোকলজিস্টকে কনসাল্ট করুন।

আমাদের শেষ কথা

তাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। নিজের যত্ন নিন। এই পিরিয়ডটাই কিন্তু আমাদের সম্পদ, আমাদের মেয়েদের শক্তির উৎস। তাই নিজের শরীরের খেয়াল রাখুন, স্বপ্ন দেখিতে থাকুন স্বপ্ন সত্যি করতে থাকুন। আর আজকাল আর আগেকার দিনের মত নেই। আজকালকার স্বামী বা প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকা বা স্ত্রীদের শরীরের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান। সুতরাং ডেট আজকাল অনেক ক্ষেত্রে তারাই মনে রাখে। তাই সগর্বে বলুন আমাদের ঋতুস্রাব আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। আমাদের ঋতুস্রাব কারো সহানুভূতির বস্তু নয়। 😊😊😊( নিশ্চয় এটি শেয়ার করতে পারেন। যেভাবেই হোক শেয়ার করুন। অন্তত কিছু মানুষের উপকার হলেও হতে পারে।)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url