কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন বিস্তারিত

পেট পরিষ্কার হচ্ছে না, পায়খানা করতে কষ্ট হয়, টয়লেটে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয়,কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, সমাধান কি ? আমি এই পোস্টে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ আর সেগুলোর সমাধান তুলে ধরবো। যদি আপনারা এর সমাধান সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
                                                              
কোষ্ঠকাঠিন্য

প্রত্যেকটা কারণ সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলবো যাতে আপনার পেটে কি হচ্ছে পুরোটাই বুঝতে পারেন, আর সমাধান মেনে চলতে সুবিধা হয়। শুরু করছি.....

ভূমিকা

এমন একটি রোগ যা অনেকেই বলতে লজ্জা পান। যদি আমাদের পেট ভালোভাবে পরিষ্কার না হয়, তাহলে আমাদের গ্যাসের সমস্যা হতে পারে, তাছাড়া খাবার খেতেও কোন রুচি আসে না। যদি এই সমস্যা দীর্ঘদিন চেপে রাখা হয় তাহলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই আজকে আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনার থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ ও এর সমাধান সম্পর্কে জানাব। আশা করি এতে আপনারা উপকৃত হবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য কি

কোষ্ঠকাঠিন্য (ইং: Constipation) একটি অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হন না। সাধারণত: এক-দুই দিন পরপর মলত্যাগের বেগ হওয়া এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশন কোষ্ঠকাঠিন্য বলে পরিচিত।

কোষ্ঠকাঠিন্য লক্ষণ

এই সমস্যায় সচরাচর যে লক্ষণগুলি দৃষ্টিগোচর হয় সেগুলি হলো: মল শুষ্ক, শক্ত ও কঠিন মল, মলত্যাগে অনেক বেশি সময় লাগা, মল ত্যাগের জন্য অনেক বেশি চাপের দরকার হওয়া, অধিক সময় ধরে মলত্যাগ করার পরও অসম্পূর্ণ মনে হওয়া, মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভব, এবং সাপোজিটরি বা অন্য কোনো উপায়ে মল নিষ্কাশনের প্রচেষ্টা।

কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ ও সমাধান

খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকা

পেট পরিষ্কার হওয়ার জন্য খাবার থাকা কেন খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা একটু বুঝিয়ে বলি। আমাদের পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ি যেখানে পায়খানা তৈরি হয় এবং জমা থাকে সেখানে এসব ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে।অর্থাৎ আজ পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে i5 বাড়ি থাকলে পায়খানা নরম হয়, ভারী হয় আর সেই পায়খানা নাড়িভুঁড়ি ভেতর দিয়ে, সহজেই এগোই এবং সহজেই সেটা শরীর থেকে বের করা যায়।

আর আরো অনেক ভাবে সাহায্য করে। তাই খাদ্য যদি যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকে তখন কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।তাহলে সমাধান কি খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে কোন কোন খাবারে পাওয়া যায় ডাল ছোলা গাজর শসা টমেটো আপেল কলা প্রায় সব শাকসবজি ফলমূল অন্যান্য গোটা শস্যদানা ইত্যাদি গোটা শস্যদানা কি লাল চাল লাল আটা এগুলো থেকে সাদা করা হয় তখন পানির পরিমাণ কমে যায়। 

হাঁটার জন্য একই কথা প্রযোজ্য কোন কোন খাবারে পাওয়া যায় তা তো জানলাম কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে কি কি পরিবর্তন আনবে ফাইবারের পরিমাণ বাড়বে উপায় বলব আমরা প্রায় সবাই রুটি কিংবা ভাত খাই এই ক্ষেত্রে যদি আমরা লালা তা বানচাল ব্যবহার করি তাহলে আমাদের খাবারের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে দুই ভাবে রুটি শাকের ডাল খেতে পারেন। ডালে ভালো পরিমাণে ফাইবার আছে তিন প্রতিবার খাওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন। 

প্রতিবেলায় যদি সবজি খেতে পারেন তাহলে অনেক পাইবার পেটেজাবে সবজির তরকারি না খেতে চাইলে বা সবজি রান্না করা না হলে আরেকটা উপায় আছে শসা গাজর টমেটো কেচাপ বানিয়ে ফেলতে পারে পেটের একপাশে ভালো পরিমাণে সাড়া দিয়ে খাওয়া শেষ করে সেখান থেকেও অনেক কয়বার পাওয়া যাবে নাস্তা খাওয়ার সময় একটা ফল যেমন কলা আপেল বানাস্পতি খেতে পারেন অল্প করে বাদাম খেতে পারেন, সাথে যেসব ফল শাকসবজি খোসাসহ খাওয়া যায় সেগুলো খোসাসহ খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

যেমন আপেল টমেটো খোসাসহ আলু কারো সাথে ফাইবার থাকে তবে খোসাসহ পেলে অবশ্যই অবশ্যই ভালো করে সেগুলো ধুয়ে নিবেন যখন সম্ভব হলনা সবজি করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন ব্লেন্ড করলে জুস বানালে বানালে আর্টস কমে যায় তবে খাবারে ফাইবার বাড়ানোর ক্ষেত্রে দুইটা জিনিস মাথায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রথমত হঠাৎ করে খাবারের পরিমাণ বাড়ালে অনেকে বায়ু সমস্যা দেখা দেয় বা পেট ফাঁপা লাগতে পারে তাই ধীরে ধীরে খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বাড়াবে যে সাপটা পরামর্শ বললাম সেগুলো নিয়ে একটা পরিকল্পনা তৈরি করবে আপনার সুবিধা অনুযায়ী কোনটা আগে কোনটা পরে করবে একসাথে সবগুলো শুরু করবেন না দ্বিতীয়ত একটু আগেই বলেছি যে পাইবার পানি শোষণ করে তাই খাদ্যে ফাইবার এর পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে যথেষ্ট পরিমাণ পানি নিশ্চিত করতে হবে।  

যথেষ্ট পরিমাণে পানি না খাওয়া

পায়খানা নরম করতে হলে শরীরের পানি প্রয়োজন হয় আবার পায়খানা যাতে আমাদের বৃহদন্ত্রে অর্থাৎ পেটের নাড়িতে সহজে চলাচল করতে পারে কোথাও আটকে না থাকে তার জন্য প্রয়োজন পানি তাই আপনি যদি যথেষ্ট পরিমাণ পানি রাখার তাহলে পায়খানা নরম না হয়ে শক্ত হওয়া আর কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে সমাধান কি দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে সেই পানি ব্যবহার করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে আপনার সাথে একটা এক লিটারের বোতল রাখতে পারেন তাহলে দিনে কতটুকু পানি সেটা হিসাব করতে সহজ হবে।

দীর্ঘ সময় ধরে শুয়ে বসে থাকা

আমরা যদি হাঁটাচলা কমিয়ে দেয় শারীরিক পরিশ্রম না করি অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে বসে থাকি ব্যায়াম না করি তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে শরীরচর্চা করলে আমাদের বৃহদন্ত্র অর্থাৎ পেটের ভেতরে থাকে নাড়িভুঁড়ি সচল হয় এবং স্বাভাবিক পায়খানা হতে সাহায্য করে। আমরা যত বেশি বাসা থেকে কাজ করবো বাসা থেকে অনলাইন ক্লাস করবো অফিসে বা ইউনিভার্সিটি তে যাওয়ার সক্ষম হবে ততই আমাদের হাঁটাচলা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

হয়তো সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দুই কদম দিয়ে টেবিলে বসে সারাদিন সেখান থেকেই আপনি কাজ করছেন বা ক্লাস করছেন দিনে আর ব্যায়াম করা হচ্ছে না তখন কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় কি করতে পারেন প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করা ব্যায়াম করা বা দৌড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

একদম কিছু না করার চেয়ে অল্প কিছু করাও শ্রেয় আজকে থেকেই শুরু করতে পারে ফরেন চিন্তা করলেন প্রতিদিন 10 মিনিট 15 মিনিট দ্রুত হবে তারপর আস্তে. সময়টা আপনি পাঠাবেন আর একটানা অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে বা বসে থাকবেন না একটু উঠে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করে নিবে কতক্ষণ ব্যায়াম করতে হবে আপনার বয়স 19 থেকে 64 এর মধ্যে হয়। 

তাহলে আপনার লক্ষ্য থাকবে সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘন্টা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম গুলো হলো দ্রুত হাঁটা সাইকেল চালানো ইত্যাদি যদি তার চেয়ে বেশি খাটুনির ব্যায়াম করে যেমন দৌড়তে ফুটবল খেলা দড়ি লাফানো তাহলে আপনার লক্ষ্য হবে সেগুলো সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা করে করা অর্থাৎ সপ্তাহে 75 মিনিট।

পায়খানার চাপ আসলে টয়লেট চেপে রাখা

পায়খানা পেলে সেটা আটকে রাখলে দিন দিন শরীর সেটা থেকে পানি শুষে নেয় ফলে পায়খানা ক্রমেই শক্ত হতে থাকে সেটা শরীর থেকে বের করা খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয় কি করবে পায়খানার চাপ আসলে বেশি দেরি করবেন না বাথরুমে চলে যাবেন যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ আছে তাদের জন্য আমরা প্যানে যেভাবে বসে সেই দেহভঙ্গি পায়খানা করার জন্য সবচেয়ে ভালো তাই যদি সম্ভব হয়. মদিনা বসে প্যাড ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন হচ্ছে এইটা হচ্ছে এইটা তবে বাসায় যদি প্যান্ট না থাকে বা কমোড ব্যবহার করতেই হয় তাহলে যেটা করতে পারেন সেটা হল পায়ের নিচের ছোট টুল দিয়ে পা উচু করতে পারে হাঁটুদুটো কোমরের উপরে তোলার চেষ্টা করবেন।

মানসিক উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতা

আপনি যদি অনেক মানসিক চাপে থাকে উদ্বিগ্নতা কিংবা বিষণ্ণতায় ভোগে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে কি করতে পারে মানসিক প্রশান্তি আনে এমন কিছু কাজ করার চেষ্টা করবেন সেটা হতে পারে আপনজনের সাথে সময় কাটানো আর যদি আপনি বিষন্নতা বাহ্যিক পারেন অথবা উদ্বিগ্নতায় কি রোগে ভুগে থাকে তাহলে সেই রোগের চিকিৎসা নেবেন আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য আস্তে আস্তে সেরে উঠবে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কিছু ওষুধ নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে যেমন আমাদের জাতীয় ব্যথার ওষুধ আয়রন ও ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে সমাধান কি নতু্ন শুরু করার পরে যদি মনে হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে গেছে আপনারা কি জানেন তিনি ওষুধ বদলে দিতে পারেন বা কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার জন্য আলাদা ওষুধ দিতে পারেন আর যদি এমন হয় যে আপনাকে সারাজীবন খেতেই হবে তাহলে আগে যে উপায়গুলো বললাম সেই উপায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে রাখার চেষ্টা করবেন।

দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

ইসবগুল গুঁড়ো গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে খুব উপকার পাওয়া যায়। ক্যাস্টর তেল: আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তবে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা খুবই উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। রাতে গরম দুধের সঙ্গে আধা চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল খান। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার খাবার

লাল চাল, লাল আটা, ডাল–জাতীয় খাবার, চিয়া সিড, শাকসবজি ও বাদাম এ ধরনের খাবার। এসব খাবার আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে। ইসবগুলের ভুসিও খুব কার্যকর। তবে সেটা খেতে হবে বুঝে–শুনে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম

হাঁটা, জগিং, ফ্রি-হ্যান্ড, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা- এই ব্যায়ামগুলো করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ভাল থাকা যেতে পারে। সুস্থ থাকতে যোগাসন বা যোগ ব্যায়ামের বিকল্প নেই। যোগাসনের নিয়মিত অভ্যাস সুস্থ ও সবলভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা সৃষ্টির মাধ্যমে আপনাকে সফলতা পেতে সাহায্য করে।

লেখকের শেষ কথা

সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য কোনো গুরুতর রোগের কারণে হয় না তবে কিছু ক্ষেত্রে রোগের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে যেমন থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ডায়াবেটিস রোগ হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কখন ডাক্তারের সহায়তা নিবেন যদি ঘরোয়া উপায়ে সমাধান না হয়। যদি দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগেন পেট ফাঁপা লাগে অনেক দিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার উপযোগী। 

ডায়রিয়া শুরু হয় যদি পায়খানার সাথে রক্ত যায় বা পায়খানা কালো হয় পাঠানো রাস্তায় যদি ব্যথা হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে যদি পেট ব্যথা হয় বা জ্বর আসে সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগতেছে. যদি ওজন অনেক কমে যায় কোন কারন ছাড়াই বা কোনো চেষ্টা ছাড়াই যদি রক্ত শূন্যতায় ভোগে এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে একজন ডাক্তারের সহায়তা নেবে নিরাপদে থাকবেন। 

আরো পড়ুনঃ ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয় 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url