অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম জেনে নিন বিস্তারিত
আপনারা অনেকে আছেন যারা স্টেশন থেকে অনেক দূরে থাকেন অথবা কোন কোন সময় টিকিট ক্রয়ের জন্য স্টেশনে যাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু সেই চিন্তা এখন আর নেই আপনি চাইলে ঘরে বসেই আপনার হাতে টাকা মোবাইল ফোনটা দিয়েই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে পারবেন।
ভূমিকা
এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সকল প্রকার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। তাছাড়া এর পাশাপাশি আমরা আপনাকে জানাবো অনলাইনে কোন সময় টিকিট কাটতে পারবেন। টিকিট কত ধরনের হয়ে থাকে, কোন টিকিটটি আপনার জন্য বেশি উপযোগী, ট্রেনের কোন ক্লাসে কি রকম সুবিধা ও অসুবিধা সেগুলো তুলে ধরব। আপনারা যদি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সকল নিয়ম এবং তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের এই পুরো পোস্টটি অনুসরণ করুন। এই পোস্টে খুবই সহজ ভাষায় অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ক্রয় করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার সময়
বর্তমানে আপনি ২৪ ঘন্টার যেকোনো সময়ে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটা যায়। আপনি যেইদিন ভ্রমন করবেন তার ১০ দিন পূর্বে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে পারবেন।
ট্রেনের টিকিট কাটতে কি কি লাগে ?
আপনি যদি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে চান, তাহলে জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা আপনার জন্মনিবন্ধন দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তারপর সেটি নির্বাচন কমিশনে রক্ষিত ডাটাবেজ থেকে যাচাই করা হবে। এরপর আপনি টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে একজনের জাতীয় পত্র দিয়ে অন্যজন টিকিট ক্রয় করে ভ্রমণ করতে পারবেনা।
ট্রেনে কত বছরের বাচ্চার টিকিট লাগে ?
২০২০ সালের ৬ মার্চ এর একটি বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায় যে, পাঁচ বছরের কম বয়সের বাচ্চার ট্রেনে ভ্রমণ করার জন্য কোন টিকিটের প্রয়োজন হয় না। তবে বাচ্চাটি যদি পাঁচ বছরের বড় হয় তাহলে তাকে প্রাপ্তবয়স্কদের মত টিকিট ক্রয় করে তারপর ভ্রমণ করা লাগবে।
আমার ট্রেন কোথায় অবস্থিত
আপনি যদি আপনার কাঙ্খিত ট্রেনের অবস্থান জানতে চান তাহলে আপনার যে কাজগুলো করতে হবে, প্রথমে আপনি রেলওয়ে অ্যাপটি ওপেন করুন এবং "রানিং স্ট্যাটাসে" হয়তো জানবে না আলতো চাপ দিন এবং আপনার ট্রেনের নাম অথবা ট্রেনের নম্বর লিখুন। একবার আপনি ট্রেনের নাম্বার নামবল লিখলে আপনার ট্রেনের বর্তমান অবস্থান আপনি জানতে পারবেন।
আরো পড়ুন: কম্পিউটার ও ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
বর্তমানে অনলাইনে টিকিট ক্রয় করা অনেক সহজ। আসুন কিছু সহজ পদ্ধতিতে আপনাদেরকে অতি দ্রুত অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার পদ্ধতি দেখায়।
মূলত একাউন্ট খুলে লগইন করার পরেই অনলাইনে টিকিট কাটার মূল প্রক্রিয়া শুরু হয়। আপনার যদি অ্যাকাউন্ট না থেকে থাকে তাহলে এই বাটনে ক্লিক করে জেনে নিন কিভাবে লগইন করতে হয়। লগইন করা হয়ে গেলে আপনি প্রথমে যেতে হবে হোম (HOME)পেজে।
ধাপ-১ ট্রেন সার্চ করুন
হোমপেজে আসলে একটি ইন্টারফেস আপনারা দেখতে পারবেন ।এখানে দেখুন একটি জায়গায় FROM এবং আরেকটি জায়গায় TO লেখা আছে. যে ঘরটিতে FROM লেখা আছে ওখানে আপনি যে স্টেশন থেকে উঠছেন সেই স্টেশনের নাম দিবেন । আর যেই ঘরে TO লেখা আছে সেখানে দেবেন আপনার গন্তব্যস্থল অর্থাৎ আপনি যে স্টেশনে যাবেন।
মনে করুন আপনি এখন ঢাকা স্টেশনে আছেন এবং আপনি ১০ই আগস্ট রাজশাহী যাবেন। এখন এই তথ্যটি যেভাবে পূরণ করবেনঃ
১। আপনি যে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠবেন সেটির নাম লিখুন।
২। আপনি যে স্থানে যাবেন অর্থাৎ আপনার গন্তব্য স্থলের নাম লিখুন।
৩। আপনি যেই দিন যাবেন সেই যে তারিখটা ওখানে বসান আপনি সর্বোচ্চ ১০ দিন আগে আপনার ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন।
৪। ট্রেনের ক্লাস সিলেক্ট করুন। ট্রেনের বিভিন্ন ধরনের ক্লাস হয়ে থাকে যেমন:-
- AC_B (এসি বার্থ)
- AC_S (এসি সিট)
- SNIGDHA (স্নিধা)
- F_BERTH (এফ বার্থ)
- F_SEAT (এফ সিট)
- F_CHAIR (এফ চেয়ার)
- S_CHAIR (শোভন চেয়ার)
- SHOVAN (শোভন)
তবে এখানে সব ধরনের টিকিট সব টেনের জন্য প্রযোজ্য নয় ট্রেনের মান বেদে টিকিটেরও মানের তারতম্য হয়। আর টিকিটের মানের সাথে সাথে তার দামেরও মান বৃদ্ধি পায় এখন আপনি যে ধরনের টিকিট বা ক্লাসে ভ্রমণ করতে চান সেটি সিলেক্ট করুন।
ট্রেন নির্বাচন করুনট্রেন সার্চ করার পরে যদি আপনার সার্চ সফলভাবে হয়ে থাকে। তাহলে আপনি কিছু ট্রেনের নাম দেখতে পারবেন এবং সেই ট্রেনগুলো কখন স্টেশন থেকে ছাড়বে এবং কখন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যস্থল পৌঁছাবে সেই সময়ে উল্লেখ করা থাকবে । এর পাশাপাশি ওই ট্রেনে কোন ক্লাসে কতটি টিকিট ফাঁকা আছে এবং সেই টিকিটের মূল্য কত সেটাও দেখা যাবে।
সবুজ কালারের BOOK NOW বাটনে চাপ দিয়ে আপনার পছন্দের ট্রেনটি সিলেক্ট করুন।
ধাপ -৩ঃ
কোচ এবং ট্রেনে ওঠার স্টেশন নির্ধারণ করা। সবুজ কালারের BOOK NOW বাটনে চাপ দিলেই নিচের ছবির মত একটি পেজ খুলে যাবে.
উপরের ছবিতে একটি ট্রেনের বগীর লেআউট দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে আপনার পছন্দের বগী তিন নির্ধারণ করতে হবে। একদম উপরের দিকে খেয়াল করলে দেখতে পারবেন কোচ সিলেক্ট করার একটি জায়গা রয়েছে ।যেহেতু আমি প্রথমে "ঙ" কোচটি পেয়েছি। তবে এই কোচের সকলকে বিক্রি হয়ে গেছে তাই আমাকে অন্য কোচ সিলেক্ট করতে হবে।
ধাপ -৪ঃ
সিট নির্ধারণ করা। এবার সিট সিলেক্ট করার পালা। সিট সিলেক্ট করার সময় অবশ্যই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রঙের উপর নজর দিতে হবে
- সাদাঃ সিটটি ক্রয় এর জন্য খালি আছে।
- মিষ্টিঃসিটটি ইতোমধ্যেই ক্রয় হয়ে গেছে।
- গাড়নিলঃ সিটটি আপনি নির্ধারণ করেছেন।
সাদা সিট গুলোর মধ্য থেকে আপনার পছন্দের সিটে নির্ধারণ করলে ওই সিট নম্বরে চাপ দিলে সিটটি বুকিং হওয়া শুরু হবে কিছুক্ষণ পর সিটের রং সাদা থেকে গাড়নীল হয়ে গেলে আপনি বুঝবেন যে আপনার সিটটি সিলেক্ট করা হয়ে গেছে এরপর ডান পাশের সবুজ রঙের CONTINUE PURCHASE বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে যাবেন।
ধাপ -৫ঃ
যাত্রী তথ্য প্রদান করুন। অনলাইনে টিকিট কাটার সময় আপনার নামে তা ইস্যু হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যদি একের অধিক টিকিট কেটে থাকেন তাহলে অন্যান্য যাত্রীদের নাম বয়স ইত্যাদি সিলেট করতে হবে।
ধাপ -৬ঃ
অনলাইনে ভাড়া পরিশোধ করুন। অনলাইনে টিকিট কাটার পর সেই টিকিটের মূল্য পরিশোধ করার ব্যবস্থা রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। এখন এই পেজের নিচের দিকে মাউস কল করুন। পেমেন্ট ডিটেলস (PAYMENT DETAILS) সেকশনে মোবাইল ব্যাংকিং ও ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এর সাহায্যে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন।
আপনার যেই পদ্ধতিটি সুবিধা মনে হয় সেই পদ্ধতি অনুযায়ী আপনি পেমেন্ট করতে পারবেন। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য যে প্রসিড টুু পেমেন্ট বাটনে ক্লিক করার জন্য আপনি সর্বোচ্চ তিন মিনিট সময় পাবেন। যদি আপনি এর থেকে বেশি দেরি করেন তাহলে আপনাকে আবার পুনরায় শুরু করতে হবে। এবার আপনি যদি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে চান তাহলে বিকাশ নগদ ও রকেটের মধ্যে যে কোন একটি সিলেক্ট করুন তারপর আপনার বিকাশ নম্বরটি দিন । আপনার উক্ত নাম্বারে একটা ওটিপি আসবে, ওই ওটিপিটি প্রবেশ করান এবং তারপর আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বরটি দিন। পিন নম্বরটি দেওয়ার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার বিকাশ একাউন্ট থেকে টিকিটের ভাড়াটি কেটে নেয়া হবে এবং আপনার টিকিট ক্রয় সম্পন্ন হবে।
ধাপ -৭ঃ
টিকেট সংগ্রহ করুন। আপনাকে টিকিট কনফার্মেশন নামক একটি নতুন পেজে নিয়ে যাওয়া হবে, যা নিচের চিত্রেদেখানো হলোঃ
এই পেজটিতে আপনার টিকিটের সকল তথ্য অর্থাৎ টিকিটের সময় টিকিট গন্তব্যস্থল এবং আপনার নামসহ সকল তথ্য এখানে দেখাবে। এবার এই পেজের নিচে দেখুন প্রিন্ট করার একটি অপশন আছে আপনি যদি প্রিন্টার থাকে তাহলে আপনি প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে টিকিটটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন অথবা প্রিন্ট অপশনে গিয়ে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে টিকিটটি সেভ করে নিতে পারেন।
উপরোক্ত ধাপগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে আশা করা যায় আপনি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট খুবই সহজে কাটতে পারবেন। আপনি যদি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে কোন সমস্যাই পড়েন তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে কমেন্ট করুন।
শেষ কথা
বর্তমানে প্রতিটি মানুষই তার দৈনন্দিন কাজে অনেক ব্যস্ততাই থাকে এর ফলে স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে টিকিট কাটা একটু সময় সাধ্য ব্যাপার হয়ে যায় তাই অনলাইনের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটা যদি সম্ভব হয় তাহলে সেটা হয় অনেকটা ঝামেলা মুক্ত এবং সেটা আমাদের অনেক সময় বাঁচিয়ে দেয়।
তাছাড়া টিকিট কাউন্টারে গিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটার সময় আমরা আমাদের মনের পছন্দমত সিটটি পায় না তবে অনলাইনে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে সেই সমস্যাটার সম্মুখীন আমাদের কমই হতে হয়। আমরা আমাদের ইচ্ছামত যে কোন সিট নির্বাচন করে সেই সিটটি ক্রয় করতে পারি, আশা করা যায় আমাদের উপরের এই পদ্ধতি গুলো আপনারা অবলম্বন করলে খুবই সহজেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url